কবিতা সব শিল্পকলার ভগিনী ও সব ভাবধারার জন্মদাত্রী। কবিতা এমন চিত্রকার্য যা দেখার চেয়ে বেশি অনুভূত হয়। কবিতা হলো এমন অস্ত্র যা জনগনকে ভিতর থেকে জাগিয়ে তুলে। কবিতা হলো গতিশীলতা, যে গতির শেষ নেই।
প্রকৃত অর্থে একজন কবি স্রষ্টা, স্বনির্মিতির। একজন সন্ত দার্শনিক। কবি সৃষ্টিশীল পঙক্তির মাদকতায় নিজেই টালমাটাল এক মহাসমুদ্র। কবি একইসঙ্গে প্রেম ও বিরহ, যুদ্ধ ও শান্তির অগ্রদূত। সকল স্তরের ভালোবাসা, দুঃখ-বেদনা, উন্মত্ততা- উন্মাদনার মাঝেই কবি খুঁজে পান নিজেকে। তিনি সকল ধরনের বিষবাষ্পকে নিঃশেষ করতে পারেন। স্বপ্ন দেখান সুন্দর সুপ্রভাত । দেখান শ্বাশত ভালোবাসার পথ। কাজ করেন রাখালের ভুমিকায়; সারথীর ভুমিকায় । ভৌগোলিক সীমানার বাহ্যিক সীমাবদ্ধতার কাঁটাতার তুলে ফেলেন। আহবান করেন বিশ্বভ্রাত্বের। আর এটিই কবির স্বকীয়তা।
সমগ্র পৃথিবী কবির নিবাস। যিনি হোমারের বংশধর: সতত সঞ্চারমান। কবিকে খুঁজে পাওয়ার একমাত্র স্থান তার কবিতা। কবি শাহ্ কামাল তার যাপিত জীবনকে কবিতায় ঋদ্ধ করেছেন পরম সৃষ্টিশীল কাব্যসাধনায়। তার নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্যেচর্চা, সৃজনশীল শব্দের সংসারে নিবেদিত থাকা এ এক অনন্য প্রয়াস। "রক্তে লেখা পান্ডুলিপি "কবির চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ । রক্তাক্ত লাল জুলাইয়ের পূর্বপর ও চলমান প্রেক্ষাপটের ওপর কবির কাব্যদর্শন। এই কাব্যগ্রন্থের ৭৭টি কবিতা সমাজ বাস্তবতার নানা ঘাতে প্রতিঘাতে মানবজীবনের যে সংকট ও উত্তরণের কাব্যিক সংকলন।
"আমি মৃত বলছি" কবিতায় কবি যে ভবিষ্যৎবানী প্রকাশ করেছেন । তারই চিত্র আমরা পেয়েছি জুলাই উত্তর। কবির ভাষায়—
"কোথায় লুকাবে তোমরা
কোথায় পালিয়ে যাবে তোমরা
আমি মৃত বলছি
এই ঘাসের জমিনের নিচে বহুকাল আগে ঘুমিয়ে যাওয়া এক মৃত বলছি "
"রণ পুষ্পমালা" কবিতায় জুলাইয়ের কঠিন দিনগুলোতে কবির সর্বজনীন আবেদন উপস্থাপন হয়েছে। কবির ভাষায়—
"আয় ছুটে, ছুটে আয়্—
মরণকে তুচ্ছো করে, মরণকে ঢাল করে
কি লাভ বল্ বেঁচে, মরণকে বরণ করে"
‘ডেডবডিগুলো ’কবিতায় কবি নিঁখুতভাবে তুলে এনেছেন জুলাই উত্তর সময়ের প্রতিক্রিয়া। কবির ভাষায়–
"সবগুলো ডেডবডি উঠে আসছে
উঠে আসছে
পিলখানা থেকে
শাপলাচত্বর থেকে
আয়নামহল থেকে
বেওয়ারিশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়া কবরস্থান থেকে "
এ কবিতাগুলোতে যে চিত্রকল্প উপস্থাপন হয়েছে তা শুধু কবির নিজস্ব অন্তর্নিহিত কথা নয়— এটি সর্বজনীন। কাব্যগ্রন্থটি পাঠক হৃদয়ে স্থান পাবে বলে বিশ্বাস করছি।
আমি রাঙা শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছি পতাকা হাতে
আমার কপালে গড়িয়ে পড়া গাঢ় লালটিপ
এতো কৃষ্ণচূড়া বসন্তে ফোটে না
এতো লাল শাপলা বর্ষার বিলে ফোটে না
যতোগুলো কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে যতোগুলো লাল শাপলা ফুটেছে
এই শ্রাবণ বৃষ্টির দিনের রাজপথে।
© জ্ঞানকোষ প্রকাশনী - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Share Now