চোখের বালি' বইটির সম্পর্কে কিছু কথা:
রবীন্দ্রনাথের 'চোখের বালি উপন্যাসের বিশেষত্ব এখানেই যে, এটি গতানুগতিক কোন উপন্যাসের মতো রোমান্টিকতা ও ভাবালুতা-আশ্রিত নয়। বিনোদিনী-মহেন্দ্রসহ আশা ও বিহারী সমেত আরো অনেকের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতার বাস্তবভিতিকতা নিয়ে এটি রচিত হয়েছে। বিনোদিনী-মহেন্দ্রের যৌন জীবনের দেহ-মনোময় রহস্য রক্তিমতার সনস্তাত্ত্বিক রূপায়ণ এতে ঘটেছে।
রবীন্দ্রনাথের 'চোখের বালি' (১৯০০) বাংলা সাহিত্যের প্রথম সচেতন মনস্তাত্ত্বিক (Psychological) উপন্যাস। ঘটনবিন্যাস ও চরিত্র সৃজনের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ এখানে স্বতন্ত্র স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছেন। মহেন্দ্র, বিনোদিনী, বিহারী ও আশা- এই চারটি চরিত্রই উপন্যাসের মৌল-দর্শনকে ধারণ করে আছে। প্রতিটি চরিত্রের স্বকীয় স্বাতন্ত্র্য উপন্যাসের কাহিনী ও চরিত্রচিত্রণকে প্রচালিত করেছে।
মহেন্দ্র ও বিনোদিনীর পরস্পরের প্রতি পরস্পরের কখনো আকর্ষণ, কখনো বিকর্ষণবোধউপন্যাসের ঘটনাধারাকে প্রবাহিত করেছে। বিহারীর ব্যক্তিত্বখচিত ভঙ্গি বিনোদিনীকে আকৃষ্ট করেছে। যদিও বন্ধু মহেন্দ্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিত্বময়তা খুব স্পষ্টযোগ্য নয়। বিহারীর মনে আশার প্রতি গোপন গভীর ভালোবাসা ছিলো, এটিই বিনোদিনীকে প্রচণ্ড ঈর্ষাকাতর করে তুলেছে। সেজন্য আশা ও মহেন্দ্রের জীবনবিক্ষেপে অস্থিরতা সৃষ্টিতে তৎপর হয়েছে বিনোদিনী। আশার সারল্য ও শিথিলতা মহেন্দ্র ও বিনোদিনীর অবৈধ সম্পর্ককে আরো কাছাকাছি করেছে। বিহারীর প্রতি আশার বিবেচনাশূন্য দৃষ্টিভঙ্গিও বিহারীকে কর্ম ও জীবনক্ষেত্র হতে উম্মিলিত করেছে।
© জ্ঞানকোষ প্রকাশনী - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Share Now